মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৫:০২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বর্ষাকালেও বৃষ্টি নেই, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

বর্ষাকালেও বৃষ্টি নেই, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

স্বদেশ ডেস্ক:

ভরা বর্ষাতেও বৃষ্টির দেখা নেই। গত জুলাই মাসটি গেছে খরায় যদিও এর আগের জুন মাসের ভারী বৃষ্টিতে সিলেট অঞ্চলে বন্যা হয়ে গেছে। গত ৩০ বছরে সবচেয়ে খরায় কেটেছে গত জুলাই মাসটি। আবহমান কাল থেকে আষাঢ়-শ্রাবণেই সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়ে আসছে বলেই এই দুই মাস বর্ষাকাল হিসেবে পরিগণিত। কিন্তু বাংলাদেশে ধীরে ধীরে বর্ষাকালে কমে যাচ্ছে বৃষ্টির পরিমাণ। জলবায়ুবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এ কারণেই বৃষ্টির সময়েও বৃষ্টি হচ্ছে না।

ইন্টারগভার্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশের উষ্ণ জলবায়ুতে বৃষ্টিপাতের ধরনে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে হিমবাহ গলনে এবং বর্ষার ব্যাপকতা বাড়ার কারণে বাংলাদেশে ৫ থেকে ৬ শতাংশই বৃষ্টিপাত বেশি হবে। আইপিসিসি এমন পূর্বাভাস দিলেও চলতি বছরের জুলাই মাসটি গত ৩০ বছরের অনাবৃষ্টির রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

১৯৪৯ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত বাংলাদেশে খরার রেকর্ড থাকলেও বেশির ভাগ ঘটেছে মৌসুমী বায়ুর আগে ও পরে। কিন্তু ১৯৮১, ১৯৮২, ১৯৮৪, ১৯৮৯, ১৯৯৪ এবং ২০০০ সাল কেটেছে দীর্ঘ খরায়। এর আগে ১৯৬১ ও ১৯৭৫ সাল কেটেছে খরায়। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ১৯৮১ সালের পর থেকে চলতি বছরেই গত জুলাই মাসে সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত হয়েছে বাংলাদেশে। গত ৩০ বছরে জুলাই মাসে বাংলাদেশের বৃষ্টিপাতের গড় ছিল ৪৯৬ মিলিমিটার কিন্তু গত জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত ছিল মাত্র ২১১ মিলিমিটার। বৃষ্টি কম হলে গড় তাপমাত্রা বেড়ে যায়। গত জুলাই মাসে বাংলাদেশে গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৭ সেলসিয়াস। গত ৩০ বছরে জুলাই মাসের গড় তাপমাত্রা ছিল ৩১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ৩০ বছরে জুলাই মাসের গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় এ বছর জুলাইয়ে ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।

অন্যদিকে ২০২১ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে গড় বৃষ্টিপাত ছিল ৪৭১ মিলিমিটার, ২০২০ সালের জুলাই মাসে ছিল গড়ে ৫৫৩ মিলিমিটার। বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন হলে ধানের কিছু জাতের ফলনের উপর বেশ প্রভাব পড়ে বলে কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেছেন। তিনি বলেন, সময় মতো বৃষ্টি না হলে ধানের উৎপাদন কমে যায়।

অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আমেরিকার এএসইউ স্কুল অব সাসটেইনেবল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড দ্য বিল্ট এনভায়রনমেন্টের এডজাঙ্কট প্রফেসর ড. রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম। বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনু ও লা নিনার অনিয়মিত প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের জলবায়ু ও আবহাওয়ায় পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে অসময়েও প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে, বর্ষাকালেও খরায় পুড়ছে। ঠিক একই কারণে বাংলাদেশে গত জুলাই মাসে গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। তিনি বলেন, গত জুন মাসে যে বন্যা হয়ে গেল তাও হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। বাংলাদেশে জুন মাসের মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হতে শুরু করে। অনেক সময় দেখা যায়, পুরো দেশে মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করতে জুন মাসের অর্ধেকের বেশি সময় লাগে। কিন্তু এ বছর জুন মাসেই ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতে। ফলে সিলেটে ভয়াবহ বন্যা হয়ে গেছে।’ ঢাকা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, গত তিন বছরে দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির যে প্রবণতা দেখা গেছে তাতে আমরা বৃষ্টিপাতের অস্বাভাবিক প্যাটার্ন দেখতে পাচ্ছি।

বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যেমন বাংলাদেশে পড়েছে তেমনি এশিয়ার অন্যান্য দেশ এবং ইউরোপ-আমেরিকায় ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে দীর্ঘ খরা এবং পুড়ে যাচ্ছে বনভূমি। বৃষ্টি না হওয়ায় ইউরোপের নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, গত ৫০০ বছরের ইতিহাসে ইউরোপে এমন খরা আর দেখা যায়নি। জার্মানীর রাইন নদী শুকিয়ে যাওয়ার পথে।

অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি বলেন, এতে দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা ব্যাহত হচ্ছে, বিশেষ করে কৃষি খাতে প্রভাব পড়ছে এবং উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877